রান্না ঘরে দুধ গরম করছি।এমন সময় ঘুমজড়ানো আধোস্বরে টুকি ডাক দিলো -আব্বুউউ দৌড়ে ছুটে কাছে গেলাম মেয়াটার।ঘুম থেকে উঠে কাউকে না দেখে ভয় পেয়েছে।কোলে নিতেই গলা জড়িয়ে ধ রলো।বয়স দুই পেরোলো এবার…মাঝে মাঝে ওর বুদ্ধি দেখে অবাক হই।অবাক হই ওর হাসি দেখে,মায়ের হাসি পেয়েছে।ওর মায়ের এই হাসি দেখেই তো প্রেমে পড়েছিলাম।আদর করছি এমন সময় পোড়া গন্ধ নাকে এলো… আরে দুধতো চুলোয়,মেয়েটাকে বিছানায় রেখে দৌড়ে চলে আসলাম রান্না ঘরে।মেঝেতে পানি ছিল পা পিছলে পড়ে গেলাম।উঠেই খালি হাত দিয়ে পাতিল নামাতে গিয়ে ফেলে দিলাম। কি করবো অসহ্য গরম যে….. আগে তো রান্না ঘর চিনতামই না,ওই করতো সব।কিন্ত এখন…… রুমে ঢুকে দেখি মেয়ে আমার নিজেই জামা পড়ছে।হয়তো ও জানে ওর আনাড়ি বাবা ঠিক মতো জামাটাও পড়িয়ে দিতে পারবে না…তাই নিজেই পড়ছে। আমার দিকে তাকিয়েই আবার হাসি দিলো।কান্না আটকাতে পারলাম না।জড়িয়ে গিয়ে ধরে কাদতে লাগলাম।পিচ্চি মা আমার দেখি হাতে ফু দিয়ে দিচ্ছে। খেয়াল করে দেখি গরম পাতিল ধরায় হাতে ফোস্কা পড়ছে…. গলা ধরে বল্লো-আব্বুউ নান হেসে উঠলাম। মেয়েটা গান বলতে পারলাম না।ওর প্রিয় গান প্লে করে দিলাম।ওর আম্মুর বলা একটা গান…. আম্মু তুমি গান শোনো, আমি খাবার নিয়ে আসি।ও ঘাড় কাত করে বল্লো, আচ্ছা। আব্বুউউ, আম্মু? আম্মু আসবে মা… চলে আসলাম মেয়ের সামনে থেকে।বাচ্চা মেয়ের সামনে কতোই বা কাদা যায়! ফেসবুকে ঢুকেই দেখি ওর আম্মুর ছবি।তবে অন্যদিনের মতো খুশি হতে পারলাম।পাশে ওর কলিগ,কলিগ বল্লে ভুল হবে হবু স্বামী। ওর মেসেজ আসলো-কাল ডিভোর্স পেপার যাবে কাহিনি করা বাদ দিয়ে সাইন করে দিবা। রাগে ল্যাপটপ টা ফেলে দিলাম।আমার জন্য না হোক, মেয়েটার কথাও ভাবলো না???
আব্বুউউউ ছুটে গেলাম,কোলে নিয়ে বল্লাম কি হইছে মামণি? জানালার দিকে তাকাতে বল্লো।তাকিয়ে দেখি ওর আম্মুর শাড়ীর মতো এক শাড়ী পড়ে এক মহিলা রাস্তা দিয়ে তার বাচ্চা কে নিয়ে যাচ্ছে। চোখ থেকে পানি পড়তে লাগলো।ছোট হাত দিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বল্লো-কি হইছে আব্বুউউ কিছুনা মামণি,আজ থেকে আমিই তোর আব্বু আমিই তোর আম্মু। লেখক: সত্যান্বেষী সোহান;;তোমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখতে চাই কিন্তু সে কবিতায় আজ কোন ছন্দ নেই। তোমাকে নিয়ে একটা গান বাঁধতে চাই কিন্তু সে গানে আজ কোন সুর নেই। তোমাকে জরিয়ে হাজারো গল্প রচনা করতে চাই কিন্তু আজ তাতে কোন রস নেই। তোমাকে নিয়ে একটা ফুলের বাগান সাজাতে চাই কিন্তু সে বাগানে আজ কোন ফুল নেই। তোমাকে নিয়ে একটা স্বপ্নের পৃথিবী গড়তে চাই কিন্তু সে পৃথিবীতে আজ কোন প্রান নেই। তোমাকে একটু ভালোবাসতে চাই কিন্তু সে ভালোবাসায় আজ কোন মুগ্ধতা নেই। তোমাকে একটু প্রান ভরে দেখতে চাই কিন্তু সেটা আজ আমার সাধ্যতে নেই। তোমাকে ঘিরে সবকিছু আমার কিন্তু আজ সবকিছুতেই তুমি নেই।ঘরে এসি লাগিয়ে দেয়ার চেয়ে অধিক বেশি ভালোবাসা কাজ করে তখন,যখন হাতপাখা দিয়ে বাতাস করা হয়। দামী রেস্টুরেন্টে নিয়ে খাওয়ানোর চেয়ে অধিক বেশি ভালোবাসা কাজ করে তখন,যখন প্রিয় মানুষটা ভালোবেসে যেকোনো ধরণের খাবার নিজের হাতে খাইয়িয়ে দেয়। কোনো বিশেষ জায়গায় প্রস্তুতি নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার চেয়ে অধিক বেশি ভালোবাসা কাজ করে তখন,যখন প্রিয় মানুষটা হঠাৎ করেই বলে চলো একটু বারান্দায় গিয়ে বসি। খুব দামী জামা,শাড়ি,গহনা কিনার জন্য টাকা না দিয়ে নিজে সাথে গিয়ে খুব কমদামী কিছু কিনে দেওয়ার মাঝেই অধিক ভালোবাসা বিদ্যমান থাকে। এত বড় বাড়ি,দামী গাড়ি,টাকা-পয়সা এসব প্রয়োজন হয় না ভালোবাসায়। ছোট মন নিয়ে অধিক ধন থাকা মূল্যহীন। অল্প ধন নিয়ে বড় মন থাকাটাই মূল্যবান। হ্যাঁ সংসার করতে টাকা প্রয়োজন,কারণ চাল ওয়ালা,ডাল ওয়ালা,বাড়িওয়ালা ভালোবাসার কাহিনী শুনবে না।তারা টাকা চাইবেই চাইবে। (পরিমিত টাকা+পরিমিত ভালোবাসা+সম্মান+বিশ্বাস+হারানোর ভয়+দুজন দুজনের প্রতি যত্ন= সুখী সংসার।)আমরা হলাম হুজুগে জাতি। কেউ কিছু করলে অন্যরা পিছিয়ে থাকার দলে থাকতে একদম রাজি নই, সেটা অন্যায় হলেও। এক অদ্ভুত প্রতিযোগিতায় মেতেছি সবাই। এই দেশে এখন সবকিছু সস্তাদর।
নৈতিকতা আর মুল্যবোধ ও। এসব এখন গায়ে থাকলেই মনে হয় বিপত্তি। আধুনিকতার স্রোতে নিজেকে ভাসাতে গিয়ে কিছু মানুষ নিজেকেই সস্তাদর করে ফেলেছে। প্রথম খুব অবাক হতাম, এখন কিন্তু ভয় লাগে। এ কোন সভ্যতা! আমাদের অজান্তেই একটা প্রজন্ম গড়ে উঠছে যাদের কাছে ন্যায় অন্যায় বলে কিছু নেই। আধুনিকতার জোয়ারে নিজেকে ভাসাতে গিয়ে নিজের চরিত্রে কালিমা নিজেই লাগাচ্ছে, তার অপরাধ মনে হচ্ছে না। আমার আমিকে আমি ছাড়া অন্য কেউ চিনবে না, আমি যদি মুখোশের আড়ালে অপকর্ম করে বেড়াই কেউ দেখবে না, জানবেও না কিন্তু দিনশেষে আয়নায় নিজের মুখোমুখি হবো কি করে? সবাই নগদে বিশ্বাসী হয়ে গেছে। বিশ্বস্ততা হয়ে গেছে হাল্কা। নৈতিকতা, মুল্যবোধ হারিয়ে নিজেকে কোথায় নিচ্ছে মানুষ? উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতি আর নেটের কল্যাণে সবাই নিজেকে আধুনিক করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে , নিজের অজান্তেই জড়িয়ে যাচ্ছে নোংরা প্রতিযোগিতায়। সংগী বা অভিভাবকদের চোখে ধুলো দিয়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে অনেকেই। সেদিন দেখি ক্লাস এইটে পড়ুয়া এক মেয়ে নেটের সুত্রে পরিচিত হওয়া প্রেমিকের সাথে নির্জন পার্কে দেখা করতে গিয়ে গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষকরা হাসিমুখে ছবির জন্য পোজ দিয়েছে। এটা এখন অন্যায় মনে হয়নি তাদের । এইটে পড়া মেয়ে আমার চোখে বাচ্চা কিন্তু তার প্রেমিক নাকি তিন সন্তানের বাবা! আমি হতভম্ব হবার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছি। বাবামা নিরাপত্তার জন্য মোবাইল কিনে দিয়েছে কিন্তু এই মেয়ে সেটাকে ভিন্ন কাজে লাগালো। দোষ কি শুধুমাত্র মেয়ের? এই মেয়ে নৈতিকতার কোন শিক্ষা কি পায়নি বাড়ীতে? নাকি নিজেকে আধুনিকতার স্রোতে ভাসাতে গিয়ে অনৈতিকতায় জড়িয়েছে? আমাদের ধর্ম, সংস্কৃতি আমাদের কি এসব নোংরামো শিখিয়েছে? এ কোন যুগ! এ কোন সভ্যতা! নেটেও নাকি অনেক অপকর্ম হয়। পরকীয়া ভাইরাসের মতো ছড়িয়েছে। পরকীয়ায় এক মা তার সন্তান মেরে ফেলেছে। এতো নীচুতে কি করে নামে মানুষ! নিজের স্বার্থের জন্য স্ত্রী, সন্তান, স্বামী খুন করা এতো সহজলভ্য হয়ে গেছে? এতো বদলে গেছে মানুষ! শুনতে পাই কিছু বয়স্ক নারী -পুরুষ নাকি সন্তানের বয়সীদের সাথে অবাধে প্রেম করছে, এটাকে তারা অপরাধ ভাবছে না। এতো দ্রুত বদলে যাচ্ছে সবকিছু!
আচ্ছা উনাদের দিনশেষে কি বিবেক, বোধ জাগ্রত হয়না? নাকি সেসব এখন সেকেলে হয়ে গেছে! মানুষের জীবনে অপুর্নতা, অপ্রাপ্তি থাকবেই তাই বলে নৈতিকতার পোষাক খুলে ফেলে স্রোতে ভাসবো নাকি কচুরিপানার মতো? অল্প কয়েকজনের জন্য যখন আঙুল তোলা হয় সেই লজ্জা আমাদের গায়েও লাগে। নিজের ধর্ম, সংস্কৃতি ভুলে প্রগতিশীল হবার জন্য সবার মাতামাতি। সবাই শো -অফ করার প্রতিযোগিতায়য় মজেছি। ক্ষণস্থায়ী মোহকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে একটা ভোঁতা আর নির্বোধ প্রজন্ম তৈরি হয়ে গেছে, আমার দের কাছে ন্যায় অন্যায়ের বোধ নেই। আমরা আমাদের সন্তানদের শিক্ষা, সহবত কিছুই হয়তো শিখাতে পারিনি।প্রেম করলেই নিজের সবটা উজাড় করে দিয়ে,নিজস্বতা বলে কিছুই রাখেনা কয়েকদিন পরে ব্রেক আপ হলে ব্ল্যাকমেল থেকে বাঁচতে সুইসাইড বেছে নেয় অনেকেই। নিজেকে এতো সহজলভ্য করার দরকার কি? এই সংস্কৃতি আমাদের নয়। আমার ধর্ম,সংস্কৃতি আমাদের মানতেই হবে। পশ্চিমাদের সবকিছু কেন আমরা নিবো? আমাদের নিজস্বতা কি খুব খারাপ? আমার মনে হয় এতো বইয়ের চেয়ে নৈতিকতা বোধ জাগ্রত করার দরকার বেশী। ঘর বড় শিক্ষালয়। সময় হয়েছে সচেতন হবার।ওদের অনুভুতি অসাড় হয়ে যাচ্ছে তাই আমাদের স্বার্থেই আমাদের এগিয়ে আসতে হবে।